বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

আইয়ুব (আলাইহিস সালাম): বিশ্বাস এবং ধৈর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত


আসসালামু আলাইকুম,
আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময়ে ছোটবড় অসংখ্য বিপদের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। আল্লাহর প্রতি (মোটামুটি) বিশ্বাস থাকার পরও যখন আমাদের জীবনে এত বিপদ নেমে আসে তখন কারও কারও মনে দেখা দেয় অবিশ্বাসের হাতছানি, আল্লাহর প্রতি আস্থায় দেখা দেয় ফাটল। কিন্তু এমনটাই কি হওয়া উচিত? আসুন, এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর ঘটনা থেকে।

সূরা আল বাক্বারাঃ ১৫৩একবার ফেরেশতারা মানব জাতি, আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য ও অবাধ্যতা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তাদের মধ্যে একজন বলেছিলেন পৃথিবীতে আইয়ুব (আলাইহিস সালাম) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তিনি ছিলেন একজন অনুগত বান্দা যিনি সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করতেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর জীবনের প্রথম আশি বছর পর্যন্ত সম্পদশালী রেখেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহর ইবাদত কিংবা শুকরিয়া আদায় করার কথা ভুলেননি। তিনি সব সময় তাঁর সম্পদ থেকে গরীব দুঃখীদের দান করতেন।


শয়তান মনে করত, আইয়ুব (আলাইহিস সালাম) এর মত এমন অনুগত কোন বান্দা থাকতে পারে না। সে ভাবতো তাঁর সম্পদই এই আনুগত্যের কারণ। তাই সে আল্লাহর কাছে এমন ক্ষমতা পাওয়ার জন্য আবেদন করল যাতে সে আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর সমস্ত সম্পদ কেড়ে নিতে পারে, যার ফলে তিনি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্ত সম্পদ হারিয়েও আল্লাহর প্রতি আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর আনুগত্য ছিল অপরিবর্তনীয়। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, সমস্ত সম্পদের মালিকই আল্লাহ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহর প্রতি যিনি আমাকে সম্পদ দিয়েছেন ও আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছেন। এটা শয়তানকে আরও ক্ষেপিয়ে দিলো।

আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর সম্পদ হারানোর পর শয়তান আরও দুবার চেষ্টা করেছে তাঁকে ইসলামচ্যুত করার জন্য, আল্লাহর কাছে তাঁর স্বাস্থ্য ও সন্তান কেড়ে নেয়ার অনুমতি চেয়ে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন, আমি তোমাকে তাঁর শরীরের উপর ক্ষমতা দান করব, কিন্তু তোমাকে সতর্ক করছি যাতে তুমি তাঁর আত্মা, জিহ্বা ও হৃদয়ের ধারে কাছে না যাও। কারণ, এগুলোতে লুকানো থাকে বিশ্বাসের মূল রহস্য। আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর স্বাস্থ্য ও সন্তান দুটোই কেড়ে নেয়া হল। কিন্তু তারপরও তিনি ঠিক তেমনই আচরণ করলেন, যেমনটা করেছিলেন সম্পদ হারানোর পর।

শয়তান বুঝতে পারল আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-কে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সে আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীকে তাদের অতীত সুখ-সমৃদ্ধির কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করল। এবার শয়তান সফল হল। যার ফলে আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রী তাঁর নিকট তাদের বর্তমান অবস্থার জন্য ক্ষোব প্রকাশ করল। এতে আইয়ুব (আলাইহিস সালাম) খুব কষ্ট পেলেন এবং প্রতিজ্ঞা করলেন, যদি আল্লাহ তাঁকে পূণরায় তাঁর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেন তবে নিজ স্ত্রীকে শাস্তিস্বরূপ ১০০ টি আঘাত করবেন।

এতো কিছু করার পরও শয়তান আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-কে ইসলামচ্যুত করতে পারল না। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) পূণরায় আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর হারানো সবকিছু ফিরিয়ে দিলেন। ফলে নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য তিনি তাঁর স্ত্রীকে আঘাত করতে উদ্যত হলেন।

আল-ইমরানঃ ১৩৯আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীর প্রতি করুণার বশবর্তী হয়ে পরম করুণাময় আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিলেন যাতে সে ১০০ টি সুগন্ধী ঘাসের টুকরো দিয়ে নিজ স্ত্রীকে মাত্র একবার আঘাত করে।

বস্তুতঃ আল্লাহ পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু।

আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর এ ঘটনাটি আমাদের জন্য একটি ধ্রুব স্মারক (কনস্ট্যান্ট রিমাইন্ডার)। আমাদের উচিত নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে এ গল্পটি পড়া। আমাদের মাঝে অনেকেই জীবনের ছোটখাট অপ্রাপ্তি, ক্ষতি কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করতে থাকি। আল্লাহ আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-কে এমনভাবে পরীক্ষা করেছেন যাতে আমরা তাঁর ঘটনাটিকে নিজেদের সাথে মেলাতে পারি। তাঁর বিশ্বাস এবং ধৈর্য এমন দুটি গুণ যা প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই অর্জন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারণ করা উচিত। আল্লাহ বলেন,

নীঃসন্দেহে আমি তাকে (আইয়ুবকে) ধৈর্যশীল পেয়েছি; কতো উত্তম বান্দা ছিল সে; নিশ্চয় সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল।
[সূরা সোয়াদঃ ৪৪]

জীবনের কঠিন সময়গুলোতে আমরা অবশ্যই আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করব। চেষ্টা করব বেশি বেশি ইবাদত করার এবং অসন্তুষ্ট হওয়ার পরিবর্তে সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার। যখন, যেভাবেই তিনি আমাদের কাছ থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করুন না কেন, আমাদের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করা। আমরা জানি এ সময়গুলোতে শয়তান চেষ্টা করে আমাদের মানসিকতা, অনুভূতি এবং দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে বিপথগামী করতে। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে বান্দা চরম বিশ্বাস এবং ধৈর্যের পরিচয় দিবে, আল্লাহ কখনোই তাকে পুরস্কৃত করতে ভুলবেন না।

(স্মরণ করো), যখন আইয়ুব তার প্রভুকে ডেকে বলেছিল (হে আল্লাহ), আমাকে এক কঠিন অসুখে পেয়ে বসেছে, (আমায় তুমি) নিরাময় কর, (কেননা) তুমিই হচ্ছো দয়ালুদের সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তা আমি দূর করে দিলাম, তাকে (যে শুধু) তার পরিবার পরিজনই ফিরিয়ে দিলাম (তা নয়); বরং তাদের (সবাইকে) আমার কাছ থেকে বিশেষ দয়া এবং আমার বান্দাদের জন্যে উপদেশ হিসেবে আরও সমপরিমাণ (অনুগ্রহ) দান করলাম।
[সূরা আল-আম্বিয়াঃ ৮৩-৮৪]

যে কোন ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতেই আল্লাহ আমাদের সকলকে আইয়ুব (আলাইহিস সালাম)-এর মতো বিশ্বাস এবং ধৈর্য দান করুক। আমীন।

পাদটীকাঃ
উৎসঃ IslamicAwakening.com

0 on: "আইয়ুব (আলাইহিস সালাম): বিশ্বাস এবং ধৈর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত"