শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

সুখী জীবনের পথে তিনটি পদক্ষেপ


জীবনের সকল স্তরের মানুষের কাছে সুখ একটি সর্বজনীন লক্ষ্য হতে পারেন তিনি বুদ্ধিজীবি দার্শনিক কিংবা নিরক্ষর দিনমজুর সুখের খোঁজে সকলেই সংগ্রাম করে যায় এবং জীবনের দুশ্চিন্তাগুলো থেকে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে বেড়ায়।

কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কেবল আংশিক কিংবা বাহ্যিক সুখ অর্জন করে, যা তাদেরকে তাদের সমস্যাগুলো থেকে সাময়িক মুক্তি দিয়ে থাকে।

চিরস্থায়ী সুখ খুঁজে পেতে হলে, যা একজন মানুষকে প্রকৃত সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে, প্রত্যেকের উচিত হৃদয় ও মনকে উন্মুক্ত রাখা, কারণ একজন প্রকৃত জ্ঞানী তো তিনিই যিনি সত্যের সন্ধান করেন এবং সাথে সাথে তা গ্রহণ করেন।

. সুখের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ এবং পরিতৃপ্তির ভিত্তি হতে হবে দৃঢ় বিশ্বাস ও পূণ্যময় কাজ করাঃ

যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।
[সূরা আন-নাহলঃ ৯৭]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস ধারণ এবং পূণ্যময় কাজ সম্পাদন করে সে সুখী জীবন লাভ করবে এবং আখিরাতে পুরস্কৃত হবে।

এর কারণ সুনির্দিষ্টঃ যাদের খাঁটি বিশ্বাস রয়েছে, যা তাদের ভালো কাজের দিকে ধাবিত করে, হৃদয়ের পূণর্গঠন ও আচার-ব্যবহারকে পরিশুদ্ধ করে, যে কোন ক্ষেত্রে নির্দেশ করার মতো তাদের মৌলিক ভিত্তি রয়েছে - হতে পারে তা যেকোনো বিষয়, যা আনন্দ ও তৃপ্তি কিংবা দুঃখ ও নিরাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃত বিশ্বাসীর গূণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,

মুমিনের বিষয় কতই না সুন্দর। তার সকল অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর। আর এটা একমাত্র মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। যদি সে নিয়ামত ও সুখ লাভ করে তাহলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি সে মুসিবতে আক্রান্ত হয় তাহলে সবর করে। ফলে এ অবস্থাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।
[সহীহ মুসলিমঃ ২৯৯৯]

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এটাও জানিয়ে গিয়েছেন যে মুমিনের পুরস্কার অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে, সুখ-দুঃখ নির্বিশেষে তার জীবনে যা-ই ঘটুক না কেনো। 
 
. পূণ্যময় কাজ ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনে নিজেকে ব্যস্ত রাখাঃ

এর মাধ্যমে মানুষের অন্তর দুঃখ-দুর্দশার কারণ সমূহ থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে, বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে একজন মানুষ তার দুঃখ-দুর্দশাকে পুরোপুরি ভুলে গিয়ে সুখী ও উজ্জীবীত হয়ে উঠতে পারেন।

বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী সকলের জন্যই এটি একটি সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু একজন বিশ্বাসী তার বিশ্বাস, আন্তরিকতা এবং পূণ্যময় কাজ শিখা ও করার সময় পুরস্কারের আশার কারণে সম্পূর্ণ আলাদা।

যদি কাজটি ইবাদাতের কাজ হয় তবে সে তো পুরস্কৃত হবেই, আর যদি কোনো দুনিয়াবী কাজ হয় কিন্তু পরিশুদ্ধ নিয়্যাত থাকে, যেমন ভালোভাবে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য কাজ করা, তবে এটি তার বিষন্নতা ও দুঃখ দূর করায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

. সুখ অর্জনের আরেকটি উপায় হলো ভবিষ্যতের ব্যাপারে চিন্তিত না হয়ে কিংবা অতীত নিয়ে কান্নাকাটি না করে হাতের কাজে মনোযোগ দেয়া।

কারণেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে পানাহ চাইতেন। সাধারণত একজন মানুষ অতীতের ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, যা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, তার কারণে দুঃখ পেয়ে থাকেন কিংবা দুঃখ পেয়ে থাকেন ভবিষ্যতে কী ঘটবে তার দুচিন্তা থেকে।

একজন মুমিন বান্দার উচিত বর্তমান সময়ের জন্য বেঁচে থাকা, মনোযোগের সাথে সময়কে সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগানো। এটা তাকে তার কর্ম সম্পাদন ও দুঃখ ভুলে যেতে সহায়তা করবে।

যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সম্প্রদায়ের জন্য দু'আ করতেন কিংবা অন্যকেও দু'আ করতে বলতেন, তিনি তাদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করতেন, যাতে তাদের জন্য কৃত দু'আ কবুল হয় এবং সেসব কিছু পরিহার করতে বলতেন যা তাদের দু'আ কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।

তোমার জন্য যা উপকারী-কল্যাণকর তার প্রতিই আগ্রহী হও, আর আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। অপারগ হয়ো না। যদি তোমার উপর কোনো মুসীবত আসে তাহলে একথা বলো না যে, যদি আমি এমনটি করতাম তাহলে এরূপ হতো নাবরং বলো, এটা আমার তাকদীরের লিখন। আল্লাহ তা'আলা যেমন চেয়েছেন তেমন করেছেনকেননা যদি শব্দটি শয়তানকে কাজ করার পথ খুলে দেয়
[সহীহ মুসলিম]




উৎস
www.OnIslam.net

0 on: "সুখী জীবনের পথে তিনটি পদক্ষেপ"