মঙ্গলবার, ৩ মার্চ, ২০১৫

ইসলামিক লেকচার পরিচিতিঃ Seerah of Prophet Muhammed (PBUH)

Seerah of Prophate SAW
আস্‌সালামু আলাইকুম :) আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন। অনেকদিন আগে ইসলামিক লেকচার পরিচিতি নামে একটি বিভাগ শুরু করলেও ব্যস্ততার কারণে এখন পর্যন্ত তেমন লেখা হয়নি (জানেনই তো বেকার মানুষের ব্যস্ততা বেশি :P)। তাছাড়া নিজে লেকচার না দেখে লেখা তো আর সম্ভব নয়। তবে এই ব্যস্ততার মাঝেই কিছুদিন আগে শাইখ ইয়াসির ক্বাদির একটি দীর্ঘ লেকচার সিরিজ দেখা শুরু করেছি। এক শব্দে যদি মন্তব্য করি তবে তা হবে 'অসাধারণ!' নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী নিয়ে আমার দেখা সেরা লেকচার সিরিজ এটি। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই শাইখ ইয়াসির ক্বাদির লেকচার সিরিজ ‘Seerah of Prophet Muhammed (PBUH)’ সম্পর্কে কিছু তথ্য।

সিরিজ টাইটেলঃ Seerah of Prophet Muhammed (PBUH)

বক্তাঃ শাইখ ইয়াসির ক্বাদি

মোট ভিডিওঃ ১০৩ টি (এখন পর্যন্ত)

শাইখ ইয়াসির ক্বাদি এই ভিডিও লেকচার সিরিজটি শুরু করেন ২০১১ সালের এপ্রিলে, যা এখনো চলছে। সর্বশেষ এই সিরিজটির ১০৩তম ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী সম্পর্কিত মূল লেকচার ১০২ পর্ব পর্যন্ত। গড়ে প্রতিটি ভিডিওর দৈর্ঘ মোটামুটি ১ ঘন্টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো। এই সিরিজটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শাইখ ইয়াসির ক্বাদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী বর্ণনা করেছেন বিস্তারিতভাবে এবং বিশুদ্ধ উৎস থেকে। মূল জীবনীতে যাওয়ার আগে প্রথম তিনটি ভিডিওর মাধ্যমে তিনি শ্রোতাদের দিতে চেয়েছেন সামান্য ধারণা, যা ছিলো অনেকটা ভূমিকার মতো। প্রথম দুটি লেকচারে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর কথা বর্ণনা করেন, যা থেকে একজন শ্রোতা খুব সহজেই বুঝতে পারেন কেন নবী তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মানব বলা হয়। আর তৃতীয় লেকচারে ব্যাখ্যা করেছেন সীরাহ্‌ বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী পাঠের গুরুত্ব। প্রথম তিনটি লেকচার থেকে আমি যে পয়েন্টগুলো সংগ্রহ করেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

আল্লাহর দেয়া কিছু নামঃ
- মুহাম্মদ - সব সময় প্রশংসিত, যা পরিমাণ বোঝায়। কুর'আনে এই নামটির উল্লেখ রয়েছে ৪ বার। আর নবীদের মধ্যে এই নামটি উল্লেখ করেন মুসা আলাইহিস সালাম যাঁর ছিলো বৃহৎ অনুসারীর দল (ইহুদী জাতি)।
- আহাম্মদ - সর্বোত্তম প্রশংসা, যা গুণের পরিচায়ক। এই নামটি কুর'আনে উল্লেখ করা হয়েছে ২/৩ বার। আর নবীদের মধ্যে এই নামটি উল্লেখ করেন ঈসা আলাইহিস সালাম যাঁর ছিলো অল্প সংখ্যক অনুসারী কিন্তু তাঁদেরকে অনেক অন্যায় ও নীপিড়ন সহ্য করতে হয়েছে যা গুণের প্রকাশক।
- আল-মাহী - এর অর্থ মুছে ফেলা অর্থাৎ তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ কুফ্‌রকে মুছে ফেলেছেন।
- আল-আকীব - উত্তরাধিকারী, যিনি সবার শেষে আসেন।
- নাবীউর-রাহমাহ
- নাবীউত-তাওবাহ
- আল-মুকাফ্‌ফা - যিনি সবার শেষে আসেন এবং পূর্ববর্তী নবীদের বার্তার পূর্ণতা দান করেন।
- নাবীউল-মালাহীন

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনন্যতাঃ

- আল্লাহর সর্বশেষ নবী।
- এমনকি আদম আলাইহি সালামের যখন অস্তিত্ব ছিলো না অর্থাৎ যখন তাঁর দেহ ও রুহ্‌ একত্রিত করা হয়নি তখনই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবুওয়্যত দেয়া হয়।
- একমাত্র নবী যাঁকে সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে এমনকি জীনদের জন্যেও।
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁকে রু'উব দিয়ে সাহায্য করেছেন (অর্থাৎ তাঁর পৌঁছানোর আগেই শত্রুরা তাঁর প্রতি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তো)।
- তাঁকে দেয়া হয়েছে বৃহত্তম উম্মাহ।
- তাঁকে দেয়া হয়েছে সর্বোত্তম মুযেঝাঃ আল-কুর'আন।
- তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে আল-ইসরা ওয়াল-মি'রাজের মাধ্যমে।
- তিনি সমগ্র মানব জাতির নেতা।
- মানব জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁকে পূণরুত্থিতিত করা হবে।
- তিনিই সর্বপ্রথম পুলসিরাত অতিক্রম করে উম্মাহকে পথ দেখাবেন এবং জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়বেন।
- আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সর্বোত্তম মর্যাদা দান করেছেন যার নাম 'আল-ফাদিলাহ'।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ

- রুবাইয়া বিনতে মুওয়ায়ীদ বলেন, তিনি ছিলেন সূর্যের মতো।
- কা'ব বিন মালিক বলেন, তিনি ছিলেন চাঁদের মতো।
- আম্‌র ইবনে আ'স বলেন, তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকার মতো কোনো কিছুই এতো মধুর ছিলো না।
- আনাস বিন মালিক বলেন, তিনি খুব লম্বা ছিলেন না, আবার খুব খাটোও না। তাঁর গায়ের রং একেবারে শুভ্র ছিলো না, আবার পীত বর্ণও নয়। কোনো রেশমই তাঁর হাতের চাইতে কোমল ছিলো না, আর কোনো সুবাসই তাঁর সুবাসের চাইতে মিষ্টি ছিলো না।
- আল-বারা ইবনে আজিব বলেন, তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের। তাঁর কাধ ছিলো চওড়া ও চুল ছিলো পুরু।
- আলী ইবনে আবি তালিব বলেন, তাঁর চোখ ছিলো বড়, ঘন কালো। তিনি দাপিয়ে হাঁটতেন, তাঁর দু কাঁধের মাঝখানে ছিলো নবুওয়্যতের সীল মোহর (যা মূলত একগুচ্ছ ভিন্ন রঙের চুল)।

সীরাহ কীঃ

'সীরাহ' শব্দের অর্থ ভ্রমণ করা। কোনো ব্যক্তির সীরাহ বলতে বোজায় তার জীবনের পথচলা। তবে ইসলামে সীরাহ বলতে বোঝায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীকে।

সীরাহ পাঠের গুরুত্বঃ

- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জানতে নির্দেশ দিয়েছেন।
- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বাড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে সীরাহ পাঠ করা, কারণ একজন মানুষকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হলো তার সম্পর্কে আরো বেশি জানা।
- সীরাহ পাঠের জ্ঞান আমাদেরকে কুর'আন বুঝতে সহায়তা করবে।
- সীরাহ আমাদের আশা বাড়িয়ে দেয়, উদ্দম পূনরুজ্জীবিত করে
- সীরাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি মুযেঝা
- সীরাহ উম্মাহর পূনরুজ্জীবনের একটি পথ দেখিয়ে দেয়
- সীরাহ থেকে আমরা উম্মাহর সর্বোত্তম প্রজন্মের কথা জানতে পারি
- সীরাহ পাঠের মাধ্যমে আমরা সেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবো যার মাধ্যমে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে বর্তমানে যে মিথ্যাচার দেখা যায় তার যথার্থ জবাব দিতে পারবো।
- সীরাহ পাঠের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সর্বোত্তমের, সর্বোত্তমের, সর্বোত্তমকে। অর্থাৎ সর্বোত্তম সময়ের, সর্বোত্তম স্থানের, সর্বোত্তম মানূষ সম্পর্কে
- সীরাহ পাঠ হচ্ছে আমাদের দ্বীনকে জানা, দ্বীনের উত্থান সম্পর্কে জানা, ইসলাম কীভাবে দুনিয়াকে বদলে দিয়েছে তা জানা।

এতক্ষণ আমি যা কিছু লিখলাম তা ছিলো কেবল লেকচার সিরিজটির সূচনা থেকে আমার নেয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। তাহলে ভেবে দেখুন মূল সিরিজটিতে আমাদের জন্য কতোটা জ্ঞান লুকিয়ে আছে। আশা করি আমরা সকলেই এই মূল্যবান, জ্ঞানগর্ভ লেকচার সিরিজটি থেকে কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করবো এবং অন্যদেরও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করবো। জাযাক আল্লাহ খাইরান :)

0 on: "ইসলামিক লেকচার পরিচিতিঃ Seerah of Prophet Muhammed (PBUH)"