বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৫

বই পরিচিতিঃ অপরাজিত



কিছুদিন আগেই সেমিস্টার শেষ হওয়ায় ছুটি কাটাতে বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানেই বন্ধু শাওনের সাথে আড্ডা ও ঘোরাঘুরি করতে করতে একদিন কিনে ফেললাম নসীম হিজাযীর নতুন (আমার কাছে) একটি বই। নাম অপরাজিত। মূল নাম পরদেশি দিরখাত (পরদেশি গাছ)। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্য।

অপরাজিতবইয়ের নামঃ অপরাজিত

লেখকঃ নসীম হিজাযী

অনুবাদকঃ আবদুল মান্নান তালিব

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ উর্দু সাহিত্যের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযী রচিত অপরাজিত উপন্যাসটি মূলত এক তরুণ ঔপন্যাসিকের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন চরাই-উতরাইকে কেন্দ্র করে লেখা। আর এর সময়কাল ছিলো ঊনিশশো চল্লিশের দশক যখন উপমহাদেশে চলছিলো পাকিস্তানের আজাদী আন্দোলন। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইউসুফ বাবা-মায়ের বড় সন্তান। বাবা-মায়ের প্রিয় সন্তান হওয়ার জন্য আদব, সততা, সাহসীকতা, বুদ্ধিমত্তা, ঈমানদারীতা ইত্যাদি যতগুলো গুণের প্রয়োজন তার প্রায় সবগুলোই ছিলো ইউসুফের মধ্যে। সে ছিলো লাহোর ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র। মামাতো ভাইয়ের বন্ধুর সাথে কোয়েটায় ভ্রমণে গিয়ে মুহাম্মদ সিদ্দীক নামে এক আর্মি অফিসারের জীবন বাঁচানোর মাধ্যমে ইউসুফের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার পরিবারের সাথে। আর সেখান থেকেই ঘটনার শুরু। সিদ্দীক সাহবের অনুরোধে সে তার বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং ঐ পরিবারের ছোট্ট মেয়ে নাসরীন ও তার নানীর সাথে ইউসুফের গড়ে ওঠে ভীষণ ভাব। আর সেখানেই সে তার প্রথম উপন্যাস লেখা শুরু করে। বাড়ি ফেরার পর গ্রামে তার বাবার এক ধনী বন্ধুর বাড়ি ডাকাতের হাত থেকে রক্ষার পর পুলিশের সাথেও তার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পুলিশের চাকরীতে তার তরক্কীর পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। যদিও তার বাবা এতে অনেক খুশি হয়েছিলেন এবং চাইছিলেন ইউসুফ এই ধরনেরই কিছু করার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুক, কিন্তু তার ইচ্ছা ছিলো ভিন্ন। তার দৃঢ় স্বপ্ন ছিলো একদিন সে বড় ঔপন্যাসিক হবে এবং তার মাধ্যমেই সে তার রুটি-রুজির ব্যবস্থা করবে। আর এ ব্যাপারে তার মায়ের ছিলো পূর্ণ সমর্থন। এক সময় ইউসুফের বাবা লাহোরে বদলি হয়ে গেলে তারা সপরিবারে সেখানে চলে আসে। লাহোরে পৌঁছে সে পাকিস্তানের আজাদী আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করে। ফলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার সুখ্যাতি। ঘটনাক্রমে আবার কোয়েটায় দেখা হওয়া সেই পরিবারের সাথে দেখা হয় ইউসুফের পুরো পরিবারের, যেখানে উপস্থিত ছিলো ইউসুফের মায়ের সপ্নের শাহজাদী, নাসরীনের বড় বোন ফাহমিদা। তারপর ধীরে ধীরে দু পরিবারের সম্পর্ক হতে থাকে ঘনিষ্ট থেকে ঘনিষ্টতর। কিন্তু হঠাৎ ইউসুফের জীবনে নেমে আসে দুঃখের কালো ছায়া। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দুনিয়ায় তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব তার মা। ফলে সে হয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ। আর এই নিঃসঙ্গতায় তার পাশে এসে দাঁড়ায় ফাহমিদা ও তার পরিবার যা তাকে তার উপন্যাস সম্পন্ন করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে লেখা কিছু কথা থেকে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে উপন্যাসের মূল চরিত্র ইউসুফের মাধ্যমে লেখক মূলত নিজেরই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ফুটিয়ে তুলেছেন, যা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতে পারে যে কোনো তরুণ লেখক।


আল্লাহ আমার হাতে কলম দিয়েছেন। নিজের সময়ের সীমানার বাইরেও বহুদূর পর্যন্ত আমি দেখতে পাই। আমি পরিপূর্ণ গুরুত্ব ও বিশ্বস্ততা সহকারে আল্লামা ইকবালের স্বপ্নের তাবির লিখতে থাকবো। যখন আমার ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আমার হাত থেকে কলম খসে পড়বে তখন দুনিয়ায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার সময়ও আমার মন ও মস্তিষ্ক এবং শরীর ও আমার সমস্ত ক্ষমতা আমার পবিত্র মিশন পূর্ণ করার কাজে নিয়োজিত করতে পেরেছি বলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো।

প্রকাশকঃ  বাংলা সাহিত্য পরিষদ

প্রাপ্তিস্থানঃ কাঁটাবন মসজিদ কমপ্লেক্স (কাঁটাবন মোড়), ঢাকা।



পাদটীকা
১. নসীম হিজাযী, অপরাজিত, পৃ ৩৬৭

0 on: "বই পরিচিতিঃ অপরাজিত"