শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

আশার আলো (একটি ফিরে আসার গল্প)

আমি একটি দীর্ঘ সফর শেষে ফিরে আসছিলাম, আর আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা)-এর ফয়সালা ছিল আমার বসার জায়গা হবে একদল ভাবলেশহীন যুবকের পাশে যাদের হাসাহাসি ও কথাবার্তার শব্দ ছিল মাত্রাতিরিক্ত এবং বাতাস ছিল তাদের সিগারেটের ধোঁয়ায় পূর্ণ আল্লাহর কী অশেষ রহমত! প্লেনটি ছিল পুরোপুরি ভর্তি, যার ফলে আমি আমার বসার জায়গাও বদলাতে পারছিলাম না

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুণাহ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।সমস্যাটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তা ছিল অসম্ভব তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে আমার বিরক্তির সীমা যখন চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছাল, আমি আমার কুরআনের কপিটি বের করে যতটা নিচু আওয়াজে সম্ভব তিলাওয়াত করতে লাগলাম কিছু সময় পর যুবকগুলো ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যেতে লাগলো তাদের কেউ খবরের কাগজ পড়তে লাগলো, আর কেউ ঘুমিয়ে পড়লো

হঠাৎ তাদের মধ্যে এক যুবক চিৎকার দিয়ে বললো, যথেষ্ট হয়েছে!

আমি মনে করলাম আমার আওয়াজ সামান্য চড়া ছিল, যা তাকে বিরক্ত করছে তাই আমি তার কাছে মাফ চাইলাম এবং গুণ গুণ করে পড়তে থাকলাম যার আওয়াজ কেবল আমার কানে পৌঁছাচ্ছিলআমি লক্ষ্য করলাম, যুবকটি হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আছে এবং নিজের জায়গায় বসে ছটফট করছে কিছু সময় পর সে আমার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত হয়ে বলল, দয়া করে থামুন! আমি আর শুনতে পারছি না

তারপর সে সিট থেকে উঠে কিছু সময়ের জন্য অন্যদিকে চলে গেল কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে সালাম দিয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইলো তারপর নীরব হয়ে গেল আমি বুঝতে পারলাম না তার কী হয়েছে হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল চোখে সে বলল, তিন বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে আমি আমার কপাল মাটিতে রাখিনি, এমনকি কুরআনের একটি আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করিনি

গত একমাস ধরে আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি আর এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা আমি এ সময়ের মধ্যে করিনি তারপর আমি আপনাকে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখলাম সাথে সাথে আমার পুরো পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে গেল এবং আমার হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে গেল হতাশায় আমার মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার গলা টিপে ধরে আছে আর আপনার পঠিত প্রতিটি আয়াত যেন আমার শরীরে চাবুক কষছে

আমি নিজেকে বললাম, আর কতদিন এমন অবহেলা চলতে থাকবে? এই পথ তোমাকে কোথায় নিয়ে যাবে? এতসব হাস্য-তামাশার শেষ পরিণতিই-বা কী? তারপর আমি ওয়াশরুমে ছুটে গেলাম কেন জানেন?

আমার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছিল এবং নিজেকে লুকানোর কোন জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না এখানে

তারপর কিছু সময় ধরে আমি যুবকটির সাথে তওবাহ ও আল্লাহর দিকে পূণরায় ফিরে আসার সাধারণ বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করলাম শুনে সে নীরব হয়ে গেল

ভ্রমণ শেষে আমরা যখন প্লেন থেকে নামলাম, যুবকটি আমাকে থামালো এবং মনে হল সে তার বন্ধুদের কাছ থেকে আলাদা থাকতে চায় খুব চিন্তিতভাবে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি মনে করেন আল্লাহ আমার তওবাহ কবুল করবেন?

আমি বললাম, তুমি যদি আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে তওবাহ করো, তবে ইনশা আল্লাহ তোমার সকল পাপ ক্ষমা করে দিবেন আল্লাহ

সে বলল, কিন্তু আমি যে অনেক বড় পাপ কাজ করে ফেলেছি!

আমি বললাম, তুমি কি শুনোনি, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) কী বলেছে,

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুণাহ ক্ষমা করেন তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু
[সূরা আয-যুমারঃ ৫৩]

আমি লক্ষ্য করলাম, তার চেহারায় আশার আলো দেখা দিয়েছে এবং চোখ অশ্রুতে টলমল করছে তারপর সে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার গন্তব্যে চলে গেল

একজন মানুষের ভুল কিংবা পাপ যত বড়ই হোক না কেন, তার অন্তরে ধার্মিকতা ও সততার একটি বীজ সব সময়ই লুকানো থাকেআমরা যদি সেই বীজটির নিকটে পৌঁছে তাকে চারাগাছে পরিণত করতে পারি, ইনশা আল্লাহ একদিন সেটি গাছে পরিণত হয়ে ফল ধারণ করবেই

ধার্মিকতার এই বীজটি মানুষের অন্তরে সব সময় যুদ্ধ করতে থাকে, এমনকি যখন কারও সঠিকপথে ফিরে আসার ঝোঁক চেপে বসে তখনও আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) যখন তাঁর বান্দার ভালো চান তখন তার অন্তরের আশার আলোটিকে উজ্জ্বল করে তোলেন এবং তাকে সেই পথে পরিচালিত করেন যেই পথে সফর করেছেন দুনিয়া এবং আখিরাতের সফলতম বান্দাগণ। আল্লাহ বলেন,

অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনি ভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাদের উপর আযাব বর্ষন করেন।
[সূরা আল-আনআমঃ ১২৫]

পাদটীকাঃ
মূল লেখকঃ আহমাদ ইবনে 'আবদ আর-রাহমান আস-সুওইয়ান
উৎসঃ OnIslam.net

2 on: "আশার আলো (একটি ফিরে আসার গল্প)"
  1. শহীদ, লেখাটি পড়ে আমিও আশান্বিত হলাম। ভালো লাগল পড়ে। এই ব্লগটাকে আমার ব্লগে এড করতে হবে বলে ভাবছি। চালিয়ে যাও।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. জাযাক আল্লাহ খাইরান ভাই। দু'আ করবেন যেন চালিয়ে যেতে পারি।

      মুছুন