শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫

তিনস্তরের ছাঁকনী (শিশুতোষ গল্প)


ঘটনাটি আব্বাসীয় খিলাফার স্বর্ণযুগের সময়কার। মুসলিম সালতানাতের রাজধানী বাগদাদে বাস করতেন এক জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি তাঁর অসাধারণ জ্ঞানের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।

একদিন তাঁর পরিচিত এক লোক তাঁর সাথে দেখা করতে এসে বলতে লাগলো, জানেন, এইমাত্র আপনার বন্ধু সম্পর্কে আমি কী শুনেছি?

জ্ঞানী লোকটি বললেন, দাঁড়াও। কোনো কিছু বলার আগে আমি চাই তুমি একটি ছোট্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হও। পরীক্ষাটির নাম তিনস্তরের ছাঁকনী পরীক্ষা।

তিনস্তরের ছাঁকনী?

ঠিক তাই, জ্ঞানী লোকটি বলতে লাগলেন, আমার বন্ধু সম্পর্কে কোনো কিছু বলার আগে তুমি যা বলতে চাও তা একটু পরীক্ষা করে নিলে খুব ভালো হবে।

সে কারণেই আমি একে তিনস্তরের ছাঁকনী পরীক্ষা বলে ডাকি।

প্রথম স্তর হচ্ছে সত্য। তুমি কী এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে যা বলতে চাইছো তা পুরোপুরি সত্য?

নাহ্‌, লোকটি বললো, আসলে আমি বিষয়টি সম্পর্কে এইমাত্র জেনেছি এবং...


ঠিক আছে, জ্ঞানী লোকটি বললেন, অর্থাৎ তুমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নও যে ঘটনাটি পুরোপুরি সত্য কিনা।

এবার দ্বিতীয় স্তরে যাওয়া যাক। আর এই স্তরটি হলো কল্যাণ। আমার বন্ধু সম্পর্কে তুমি যা কিছু বলতে চাইছো তার মাঝে কী কোনো কল্যাণ রয়েছে?

নাহ্‌, বরং তা...

জ্ঞানী লোকটি বললেন, অর্থাৎ তার সম্পর্কে তুমি এমন কিছু বলতে চাইছো যাতে কোনো কল্যাণ নেই, এমনকি তার সত্যতা সম্পর্কেও তুমি নিশ্চিত নও। তারপরও তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারো। কারণ এখনো একটি স্তর বাকী রয়েছে। আর এটি হচ্ছে কার্যকারীতা।

তুমি আমার বন্ধু সম্পর্কে যা বলতে চাইছো তা কী আমার কোনো কাজে আসবে?

একেবারেই না।

সবশেষে জ্ঞানী লোকটি বললেন, ভালো কথা। তুমি আমাকে যা বলতে চাইছো তা যদি সত্যই না হয় অথবা তার মাঝে যদি কোনো কল্যাণই না থাকে কিংবা তা যদি আমার কোনো কাজেই না আসে, তবে তুমি কেনইবা আমাকে তা বলতে চাচ্ছো?


মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
[সূরা আল হুজুরাতঃ ১১]



মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
[সূরা আল হুজুরাতঃ ১২]




উৎস
www.abc.se

0 on: "তিনস্তরের ছাঁকনী (শিশুতোষ গল্প)"