সোমবার, ২ জুন, ২০১৪

শুক্রবার - সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন




মুসলিমদের জন্য শুক্রবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় এটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণকর কারণ এই দিন সমাজের অধিকাংশ মুসলিম এক সাথে সালাত আদায়ের জন্য একত্রিত হয়। সালাতের ঠিক পূর্বেই তারা একটি খুতবাহ্‌ শুনে যা তাদেরকে স্রষ্টা ও দ্বীন সম্পর্কে মূল্যবান জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রদান করা হয়। এটি একটি মহিমান্বিত দিন যার মর্যাদা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) নিজেই দান করেছেন;
সূরা আল-জুমু'আহঃ ০৯সপ্তাহের আর কোনও দিনই এমন মর্যাদার অধিকারী নয়।


একজন মুমিনের সমগ্র জীবনই ইবাদাত; এমনকি তিনি যা কিছু উদ্‌যাপন করেন তা-ও। যদিও আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য বিশেষ কোন স্থান বা সময় নেই, তবে তিনি কিছু মুহূর্ত, দিন কিংবা সময়কে অধিক মর্যাদা দান করেছেন; আর শুক্রবার এমনই একটি দিন।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ থেকে আমরা জানতে পারি,

আল্লাহর দৃষ্টিতে সর্বোত্তম দিন শুক্রবার, জুমুআর দিন।


জুমুআর সালাত ইসলামের অধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোর একটি। এটি এমন এক সময় যখন সমাজের সকল মুসলমান একত্রিত হয় এক আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য, আর পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খুঁজে পায় দৃঢ়তা ও স্বাচ্ছন্দ এবং পূণরায় নিশ্চিত করে আল্লাহর প্রতি তাঁদের বিশ্বাস ও নিষ্ঠা।

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।
[সূরা আল-জুমুআহঃ ০৯]

অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি, কখনও কখনও বৃহস্পতিবার কিংবা শনিবারও এর সাথে যুক্ত থাকে। যাই হোক, জুমুআর সালাতের সময় ব্যতীত ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিমরা চেষ্টা করে সালাতের সময়টাতে তাদের দুপুরের খাবারের বিরতি নিয়ে নিতে (ছুটি না থাকার কারণে)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অনুসারীদের বলেন,

পাঁচ ওয়াক্তের নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রামাদান থেকে আরেক রামাদানের মধ্যবর্তী দিনগুলোর ছোটখাট গুনাহের কাফ্‌ফারা পরিমাণ হয়, যদি বড় বড় গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা যায়।

এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, কোন মুসলিম যেন তার কাজ, পড়াশুনা কিংবা অন্য কোন দুনিয়াবী ব্যাপারের জন্য জুম্যআর সালাতকে অবহেলা না করে। প্রত্যেক মুমিনের উচিত অন্য যে কোন কাজের উপর জুমুআর সালাতকে প্রাধান্য দিয়ে অংশগ্রহণ করা, কারণ কোন বৈধ কারণ ব্যতীত পরপর তিনবার জুমুআর সালাত আদায় না করলে একজন মুসলমানের নাম মুমিনের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়।

যদিও শুক্রবারে জুমুআর সালাতে অংশগ্রহণ কেবলমাত্র পুরুষদের উপরই ফরয করা হয়েছে, তবে এই দিন কিছু মুস্তাহাব কাজ রয়েছে যেগুলো নারী, পুরুষ কিংবা শিশু সকলেই পালন করতে পারে। এই কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে গোসল করা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিধান করা, আল্লাহর কাছে বিভিন্ন ধরনের দুআ করা, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দুরুদ পড়া এবং কুরআনের ১৮ নম্বর সূরা অর্থাৎ সূরাআল-কাহ্‌ফ তিলাওয়াত করা।

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

সূর্য উদিত হয় এমন সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমুআর দিন। এই দিনের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত বিদ্যামান কোন বান্দা যদি সেই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে কিছু দুআ করে, তবে অবশ্যই তিনি তার দু বাস্তবায়িত করেন।

জুমুআর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোন মুসলমান আল্লাহর নিকট যাই দু করে, আল্লাহ তাই কবুল করেন। তোমরা এই মুহূর্ত্বটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর।

Whoever recites ‘Al-Qahf’ (The Cave) on Friday, God will give him a light to the next Friday.

সূর্য উদিত হয় এমন সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমুআর দিন।এই দিনেই আদম আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। এই দিনেই তাঁকে তা থেকে বের করা হয়। আর এই জুমুআর দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

আর শুক্রবারেই নাযিল হয়েছে কুরআনের একটি বিখ্যাত আয়াত,

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
[সূরা মায়িদাহঃ ০৩]

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর জীবনের একটি ঘটনায় শুক্রবারের গুরুত্ব ফুটে উঠে। ইহুদীদের মধ্যে একজন জ্ঞানী উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললো, কুরআনের মধ্যে তোমরা একটি বিশেষ আয়াত পাঠ কর; যদি সেই আয়াতটি আমাদের উপর নাযিল হতো তবে দিনটিকে আমরা বাৎসরিক উৎসব হিসেবে পালন করতাম। উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কোন আয়াত? লোকটি উত্তর দিলো, আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলামতখন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, অবশ্যই আমি সেই দিন এবং স্থানটির কথা স্মরণ করি যেখানে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো। ইতিমধ্যেই এটা আমাদের জন্য দুটো উৎসবের দিন। প্রথমত, এটা ছিল শুক্রবার-সকল মুসলিমের জন্য ঈদের দিন এবং দ্বিতীয়ত, এটা ছিল আরাফাহ্‌র দিন-হজ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরও বলেন এই আয়াতটি আসরের পর নাযিল হয় যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটের উপর বসে ছিলেন।

শুক্রবার একটি বিশেষ দিন; এই দিনে যে জুমুআর সালাত আদায় করা হয় তা একজন মুসলিমের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতীত এবং বর্তমানের অনেক ইসলামিক আলিম এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন এবং এর গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। ত্রয়োদশ শতকের বিখ্যাত ইসলামিক আলিম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

আলিমদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন।

আর তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর বই যাদ আল-মাদ এ শুক্রবারের ৩২ টি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন।

আশা করি মুমিনরা সচেতন হয়ে শুক্রবারে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তালা) তাঁর বান্দাদের উপর যে রহমত বর্ষণ করেন তার সুফল ভোগ করবে। শুক্রবার জুমুআর দিন, একটি উৎসবের দিন এবং ইবাদাত ও দুআর দিন। আসুন, আমরা সকলেই এই দিনের যথাযথ মর্যাদা দানের মাধ্যমের নিজেদের দুনিয়াবী ও আখিরাতের জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে গড়ে তুলি।

জাযাক আল্লাহ খাইরান।

পাদটীকাঃ

১. বায়হাক্বী

২. সহীহ মুসলিমঃ ৪৫০

৩. জামে আত্‌-তিরমিযী

৪. আবূ দাউদ

৫. বায়হাক্বী

৬. সহীহ মুসলিম, আবূ দাউদ, আন-নাসাঈ, আত্‌-তিরমিযী

৭. মাজমুআহফাতাওয়াহ

৮. ইব্‌ন মাজাহ



মূল লেখকঃ ইশা স্ট্যাসি

উৎসঃ www.islamreligion.com

0 on: "শুক্রবার - সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন"