মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

যেভাবে একটি মুক্তা গড়ে উঠেঃ মুসলিম নারীদের জন্য একটি খুতবাহ (পর্বঃ ২)

« পর্বঃ ১



বিশ্বাসী মা, বোন, স্ত্রী সম্পর্কে এমন আরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যা আমরা জানি এবং কিছু কিছু ঘটনা একমাত্র আল্লাহই জানেন। যখনই কোন হালাক্বার (ধর্মীয় আলোচনা) আয়োজন করা হয়, মুসলিম পুরুষদের চেয়ে নারীদের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। আমেরিকার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মুসলিম নারী। আপনি যদি কোন ইসলামিক আলোচনা কিংবা সম্মেলনে যান, সেখানেও দেখতে পাবেন মুসলিম ভাই ও বোনদের মধ্যে পার্থক্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, মাঝে মাঝে ভাইদের মাঝে অনুপ্রেরণার অভাব দেখা বোনদের মাঝে তা দেখা যায় না। আর এটা যদি ভবিষ্যতেও পরিলক্ষিত হয়, তবে ইনশা আল্লাহ এই বোনগুলোই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে একটি বিশ্বাসী নারী ও পুরুষের দল গড়ে তুলবে।
মুসলিম শিশু


ওয়াল্লাহু আকবার!

ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) যখন ছোট ছিলেন, তখনই তাঁর বাবা মারা গিয়েছিল। তিনি তাঁর ছাত্রদের বলতেন, তাঁকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর মায়ের কঠোর পরিশ্রমের কথা এবং সবসময় তাঁর জন্য দু’আ করতেন। বাগদাদের হিমশীতল রাত্রিতে তাঁর মা অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে তাঁর জন্য পানি গরম করতেন, যাতে তাঁর ছেলে আহমাদ ফজরের সালাতের জন্য উযূ করতে পারে। তারপর তিনি তাঁকে কম্বলে জড়িয়ে নিজে শুধু তাঁর জিলবাবটি পড়ে নিতেন। আর ফজরের অনেক আগেই অন্ধকার ও শীতল গলির ভিতর দিয়ে প্রধান মসজিদের দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতেন, যাতে শ্রেণীকক্ষে তাঁর ছেলে ভালো আসনটি পান। তাঁর ছেলে আহমাদ যখন ২য় কিংবা ৩য় শ্রেণীতে পড়তো, তখন সারাদিন কুর’আন ও সুন্নাহ নিয়ে পড়তো, আর তিনি সারাদিন তাঁর ছুটির জন্য অপেক্ষা করতেন, যাতে তাঁকে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। আহমাদের বয়স যখন ১৬, তখন তিনি তাঁর জন্য অর্থ এবং খাবার সংগ্রহ করে তাঁকে বললেন, “জ্ঞানের অনুসন্ধানে ভ্রমণ কর।” ইমাম আহমাদ মক্কা, মদীনা ও বিভিন্ন জায়গার জ্ঞানীদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য বাড়ি ছেড়ে গেলেন। আর এভাবেই তাঁর মা তাঁকে ইসলামের চারজন বিখ্যাত ইমামের একজন হিসেবে গড়ে তুললেন।


প্রিয় বোন,

এত কিছুর পরও একজন অমুসলিম আপনার কাছ থেকে কী আশা করে? সে কি আপনাকে মুক্ত করতে চায়? আর কীসের থেকেই বা মুক্ত করতে চায়? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেক? আল্লাহ আপনার জন্য যে (দ্বীন) জীবনবিধান নির্বাচন করেছেন তা থেকে? আর এর পরিবর্তে সে আপনাকে কী দিবে? সুখ? আল্লাহর কসম, দেয়ার মত কোন সুখের মালিক সে নয়। সে কি আপনাকে ভালোবাসা দিবে, রক্ষা করবে কবরের আযাব থেকে? কিংবা জাহান্নামের প্রহরী অথবা মৃত্যু থেকে? আর তারা কেনই বা শুধু সুন্দরী তরুণীদের মুক্ত করতে চায়? তারা কেন বয়স্কদের মুক্ত করার কথা বলে না? তারা কেন মুক্ত করার কথা বলে না নিজের দেশের নারীদের? তারা কেন নিজের ঘরের নারীদের মুক্ত করার কথা বলে না? তাদের লক্ষ্য কেন শুধুমাত্র ১৩-২৮ বছরের তরুণীদের প্রতি। আর কেন তাদের প্রথম দাবি আপনাদের হিজাব মুক্ত করা?

প্রিয় বোন,

তাদের এসব কথা খুব সতর্কতার সাথে বিবেচনা করুন। আল্লাহর কসম! শেষ বিচারের দিন তিনিই হবেন আপনার চির শত্রুঃ

"বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়।"


[সূরা যুখরুফঃ ৬৭]


একজন কাফির নারী ঠিক তাই বলে, যা সে একজন নারী সম্পর্কে ভাবে। তার দৃষ্টিতে, “আপনি কে?- এটা আপনার আসল পরিচয় না। আপনি কী পড়েন, আর দেখতে কেমন?- এটাই আপনার আসল পরিচয়!”

আর ফ্যাবিয়ান নামক এক ফ্রেঞ্চ মডেলের কথাই শুনুন, যিনি ফ্যাশন ইন্ড্রাস্টির উপর থুথু নিক্ষেপ করে বলেন, “ফ্যাশন হাউজগুলো আমাকে একটি পুতুলে পরিণত করেছিল, কাঠের পুতুল। লক্ষ্যঃ মানুষের হৃদয়কে প্রভাবিত করে মানসিকতার পরিবর্তন করা। আমি জেনেছি কীভাবে মূল্যহীন হতে হয়। আমরা একটি নোংরা পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে নংরামিই সবকিছু।”

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আরাফাহর ময়দানে দাঁড়িয়ে যখন বিদায় হজ্জের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে বলেছিলেন, “নারীদের প্রতি তোমরা বিনয়ের সাথে ব্যবহার কর।”

ইতিহাস বলে, একই বছর ইসলাম যখন এই কথা বলছিল, ইউরোপে খ্রিস্টান পাদ্রীরা তখন নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক করছিল নারীরা কী মানুষ নাকি পশু! সে পাদ্রীরাই কুফফারদের পূর্বপুরুষ, যারা আপনাদের ‘মুক্ত’ করতে চায়!

এ ব্যাপারে আরও অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। কিন্তু আমি প্রত্যেক মুসলিম মা, মেয়ে এবং স্ত্রীর প্রতি দেয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া উপদেশের কথা বলেই শেষ করবঃ

“যদি কোন নারী তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রোযা রাখে (রামাদানে), নিজেকে রক্ষা করে (জিনায় লিপ্ত হওয়া থেকে), আর তার স্বামীর কথা মেনে চলে, তবে তাকে বলা হবে যে, ‘যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, জান্নাতে প্রবেশ কর’।”

বোন আমার, সেখানেই তো আপনার যেতে চাওয়া উচিত।


"হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুতঃ তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে।"


[সূরা আনফালঃ ২৪]

আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাদের প্রকৃত জীবনের দিকে ডাকছে।

প্রিয় বোন, সাড়া দিন!

পাদটীকাঃ
উৎসঃ মুহাম্মদ আল-শরীফের এই খুতবাটি সংগ্রহ করা হয়েছে Hudatv.com ওয়েবসাইট থেকে।

1 on: "যেভাবে একটি মুক্তা গড়ে উঠেঃ মুসলিম নারীদের জন্য একটি খুতবাহ (পর্বঃ ২)"