মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩

১০ বছর বয়স্ক এক ভিখারীর কাছ থেকে শিক্ষা

গত সপ্তাহে আমি ঠিক করেছিলাম কাজ শেষে স্থানীয় কফির দোকানটিতে যাব। তাই যখন আমার কাজ শেষ হল আমি কফির দোকানে গিয়ে আমার পছন্দের কফিটি কিনে বাড়ির পথে হাঁটছিলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমি আবিষ্কার করলাম আমার দুপাশে দুটি ছোট্ট শিশুও হাঁটছে। আমি আমার ডানদিকে থাকা বালকটির দিকে হাসিমুখে তাকালাম, সাথে সাথে আমি বুঝতে পারলাম তারা আমার পাশে পাশে হাঁটছে টাকার জন্য। যেহেতু আমার হাতে কফি ছিল, তাই পকেট থেকে টাকা (পাউন্ড) বের করে তাদের দেয়া সামান্য কষ্টসাধ্য ছিল। তাই আমি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করার সময়টাতে তাদের সাথে কথা বলে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
“তোমার নাম কী?” আমি বালকটিকে জিজ্ঞেস করলাম।
পয়সা
“আবদুল্লাহ।”

“আবদুল্লাহ! খুব সুন্দর নাম! তোমার বয়স কত?”
“দশ!”

আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম এবং ভাবতে শুরু করলাম আমি কী করছিলাম যখন আমার বয়স দশ বছর ছিল। নিশ্চিন্ত মনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। প্রতি সপ্তাহে সুইমিং পুলে যেতাম এবং বাইক চালিয়ে পার্কে ঘুরতাম। শুক্রবারে পিৎজ্জার অর্ডার করতাম, আর শনিবারে বাইরে খেতে যেতাম। আমার কোন ধারণা ছিল না বালকটি কেমন অনুভব করছিল, কারণ আমার মত শৈশব তার ছিল না। তার শৈশব ছিল কঠোর, শুধু তার নিজের জন্য নয়, তার পরিবারের জন্যও তাকে টাকা চাইতে হত।


অবশেষে আমি যা খুঁজছিলাম তা পেলাম এবং বালকটির হাতে পাঁচটি এক পাউন্ডের পয়সা দিলাম। আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন আমার অপর পাশে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে দেখিয়ে তাকে বললাম, “তোমার বোনের সাথে ভাগ করে নিও।” বালকটি আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল, “সে আমার বোন নয়!” এবং অন্য দিকে দৌড়াতে লাগলো।

সাথে সাথে আমি তীব্র কষ্ট পেলাম। মেয়েটির জন্য আমার কাছে আর কোন পয়সা ছিল না। সে তখনো সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। সে আমার পাশে হাঁটতে শুরু করল এবং আশা করতে লাগলো আমি যে কোন উপায়ে তাকে কিছু পয়সা দিব। কিছুক্ষণ পর রাস্তার অপর পাশে আমি আবদুল্লাহকে দেখলাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুখে সামান্য হাসির ভাব এনে বললাম, “আবদুল্লাহ, এদিকে এসো।” দ্বীধাহীনভাবে সে চলে আসলো। “আবদুল্লাহ, আমি তোমাকে পাঁচ পাউন্ড দিয়েছি, ঠিক?” সাথে সাথে সে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলল, “হ্যাঁ, কিন্তু আমার একটি পরিবার আছে। একটি বোন আছে। সে খুব ছোট এবং এখন ঘুমাচ্ছে।”

তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি মুখে হাসি ধরে রাখলাম এবং মাঝে মাঝে মাথা নাড়িয়ে তার কথায় সায় দিলাম। “আবদুল্লাহ, আমি তোমাকে পাঁচ পাউন্ড দিয়েছি যাতে তুমি তার সাথে ভাগ করে নিতে পার। এখন এটা তোমার উপর নির্ভর করছে। তুমিই ঠিক কর কী করবে। তুমি এখন কার্পণ্য করতে পার কিংবা উদারতাও দেখাতে পার। আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে যদি উদারতা দেখাও, তবে তিনিও তোমার জীবনে এমন মানুষদের এনে দিবেন যারা তোমার প্রতি উদারতা দেখাবে। কিন্তু তুমি যদি আল্লাহর দেয়া রহমত নিয়ে কার্পণ্য কর, তবে আল্লাহও তোমার জীবনে এমন মানুষদের এনে দিবেন যারা তোমার সাথে কৃপণতা করবে এবং কোন কিছুই ভাগাভাগি করবে না। আমরা মানুষের সাথে যে ধরনের আচরণ করি তা কোন না কোন রূপে আমাদের কাছে ফিরে আসেই।” আবদুল্লাহ আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল, যেন সে আমার প্রতিটি কথা গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করছিল। সে একবার আমার দিকে এবং আরেকবার পয়সাগুলোর দিকে তাকাচ্ছিল। তারপর সে আত্মবিশ্বাসের সাথে সায় জানালো এবং পাঁচটি পয়সার মধ্যে তিনটি পয়সা মেয়েটিকে দিয়ে দিল।

আবদুল্লাহ সেদিন অল্প কিছুই শিখেছিল, কিন্তু তার চেয়েও বেশি যেনো আমি শিখেছি। আবদুল্লাহ চেয়েছিল তাকে এ পৃথিবীতে যা দেওয়া হয়েছিল তা রেখে দিতে। সে কার্পণ্য করছিল এবং চাইছিল তার আকাঙ্ক্ষাকে ধরে রাখতে। কিন্তু যখন তাকে উপদেশ দেওয়া হল এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল, সে তার অহমিকাকে (ইগো) নিজের পরিবর্তনের বাঁধা হতে দিল না। সে নতুন কোন অজুহাত বের করল না, কারণ সেগুলো তার চিন্তাধারার সাথে খাপ খায় না। সে আর আত্মপক্ষ সমর্থন করল না। সে শুনলো, ভেবে দেখলো এবং সে অনুযায়ী কাজ করল। যখন আমি বালকটিকে লক্ষ্য করছিলাম, তখন আমার চিন্তাকে দমিয়ে রাখতে পারছিলাম না। আমাদের বড়দেরও তো এমন হওয়া উচিত। কতবার আমাদের এমন উপদেশ দেয়া হয়েছে, আর আমরা না ভেবেই সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছি? আমরা কতবার জ্ঞানীর কথা শোনার পরিবর্তে নিজের আকাঙ্ক্ষাকে অনুসরণ করেছি? হতে পারে এটা আমাদের আন্তরের বিষয় কিংবা বাহ্যিক। কতবার আমরা কথাবার্তা বলার সময় অন্তরের কথা শোনার পরিবর্তে নিজের অহমকে প্রাধান্য দিয়েছি?

বন্ধুরা, পরবর্তীতে আমরা যদি কখনও এমন পরিস্থিতিতে পতিত হই, যেখানে আমাদের উপদেশ দেয়া হচ্ছে, হতে পারে এটা আমাদের অন্তর কিংবা স্মমুখে দাঁড়িয়ে থাকা কোন ব্যক্তি, ইনশা আল্লাহ আমরা আবদুল্লাহ নামের এই ছোট্ট ছেলেটির কথা স্মরণ করে তার উদাহরণটি অনুসরণ করার চেষ্টা করবঃ উপদেশটি শুনবো, আকাঙ্ক্ষা ও অহমিকার পাশাপাশি উপদেশটি বিবেচনা করব, আর যদি দেখতে পাই এটি আমাদের জন্য উত্তম, তবে সে অনুযায়ী কাজ করব।

পাদটীকাঃ
উৎসঃ লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে suhaibwebb.com ওয়েবসাইট থেকে।

0 on: "১০ বছর বয়স্ক এক ভিখারীর কাছ থেকে শিক্ষা"