মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

রামাদানে নারীদের জন্য (যাদের মাসিক চলছে) ১০ টি সহজ ইবাদাত



ইবাদাহ কী?
ইবাদাহ শব্দটি কেবল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কারণ অন্য সকল ভালো দিকও এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,


আমার ইবাদাত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।

[সূরা আয-যারিয়াতঃ ৫৬]

দু'আঅনেকেই ভুলবশত ইবাদাত বলতে কঠোর সংযমী জীবন-যাপনকে বুঝে থাকেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ইসলামে ইবাদাত শুধু সালাত, মসজিদে যাওয়া, সাদাকাহ করা কিংবা হজ্জ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কারণ যে কেউ যে কোনো হালাল কাজ, যেমনঃ ঘুমানো, খাওয়া, পান করা, কাজে যাওয়া ইত্যাদিকে ইবাদাতে রূপান্তর করতে পারে। এটা কীভাবে সম্ভব? শুধুমাত্র ভালো নিয়্যাতের মাধ্যমে! অর্থাৎ কেউ যদি এই নিয়্যাতে ঘুমায় যে, ঘুমালে তার শরীর বিশ্রাম পাবে, ফলে সে আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য শক্তি পাবে, তবে এটাই ভালো নিয়্যাত। কেউ যদি পরিবারের ভরণ-পোষণ ও দেখাশোনার জন্য কাজে যায়, তবে এটাও ভালো নিয়্যাত এবং এর জন্য সে পুরস্কৃত হবে।

Mu’aadh (may Allah be pleased with him) said:


I sleep and I get up (to pray at night), and I seek reward for my sleep as I seek reward for my getting up.

[Narrated by al-Bukhari]

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 

তুমি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ কর না কেন, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।

[সহীহ বুখারী]

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ইবাদাহ এর একটি বিস্তারিত সংজ্ঞা দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন,


যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ ভালোবাসেন, যে সকল কথা ও কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আল-ইবাদাহ দ্বারা তার সবকিছুকেই বোঝায়। হোক সে কথা ও কাজ আত্মিক কিংবা বাহ্যিক।


মাসিক চলাকালীন আমি কী করতে পারি?
অনেক বোন মনে করেন মাসিক চলাকালীন তারা খুব বেশি ইবাদাত করতে পারবেন না, কিন্তু এটা ঠিক নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের কল্যাণকর সময় দিয়েছেন, আমাদের উচিত আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এমন কাজ করে এর সৎ ব্যবহার করা। তাই এখানে দশটি সহজ ইবাদাতের তালিকা দেয়া হলো, যেগুলো মাসিক চলাকালীন সময়ে করা যেতে পারেঃ

১. আল্লাহর কাছে প্রচুর দুআ করুনঃ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের এই অপবিত্র অবস্থা যেন আপনাকে দুআ করা থেকে বিরত না রাখে। আন-নুমান ইবন বশীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ


দুআ-ই হল ইবাদত।

[আবু দাউদ]

২. নিকট আত্মীয়কে দেখতে যানঃ আপনি যখন কোনো নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান, তখন আপনাদের পরস্পরের সম্পকর্কে আরো দৃঢ় করার নিয়্যাত করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,


যে ব্যক্তি আল্লাহ পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।

[সহীহ বুখারী]

৩. প্রচুর পরিমাণে ইস্তিগ্‌ফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) ও যিক্‌র (আল্লাহকে স্মরণ) করুনঃ এটা আপনি রান্নাবান্না, ধোয়ামোছা, কাজে যাওয়া, বাজারে যাওয়া ইত্যাদি সময়েও করতে পারেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,


মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর।

[সূরা আল-আহ্‌যাবঃ ৪১]

৪. মুসলিম ও অমুসলিমদের দাওয়াত দিনঃ এটা হতে পারে ফেইসবুকে ইসলামিক পোস্ট শেয়ার করে কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে ইসলামিক জ্ঞান শেয়ার করে; আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার ব্যবহার, কথা ও কাজের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত হওয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন,


যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?

[সূরা আল-ফুস্‌সিলাতঃ ৩৩]


প্রচার করো যদি একটি মাত্র আয়াতও হয়

[সহীহ বুখারী]

৫. উপকারী বই পড়ুনঃ এমন বই নির্বাচন করুন যা আপনাকে ইসলাম, জীবনের উদ্দেশ্য ও আমাদের স্রষ্টার প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে আরও বেশি জানতে সাহায্য করবে। আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ


জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য।

[ইবনে মাজাহ]

৬. অসুস্থদের দেখতে যানঃ কোনো মুসলিম যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তাকে দেখতে যাওয়া অন্য মুসলিমদের দায়িত্ব; আর শুধু তাই নয়, অসুস্থদের দেখতে যাওয়ায় অনেক কল্যাণও রয়েছে, যার কথা আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন,


রুগীর দেখাশোনাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতের বাগানে থাকে

[সহীহ মুসলিম]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের যে ভালো স্বাস্থ্য দিয়েছেন এবং যে অবস্থায় আমাদের রেখেছেন, তার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতেও এটি আমাদের সাহায্য করবে।

৭. বারবার কুরআন তিলাওয়াত শুনুনঃ কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ আপনার তিলাওয়াতকে আরো নির্ভুল হতে সাহায্য করবে; তাছাড়া আপনি যা মুখস্থ করেছেন তা ঝালিয়ে নিতে এবং প্রতিনিয়ত হৃদয় ও মনে আল্লাহর কথা স্মরণ করতে সাহায্য করবে।

৮. অন্যকে সাহায্য করুনঃ আপনি যদি কোনো মুসলিম বোনকে কঠিন সময় পার করতে দেখেন, তবে তাকে সাহায্য করার জন্য যা কিছু করা সম্ভব করুন। যদি কোনোদিন আপনিও এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হোন, তবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা)-ও কোনো বোনকে আপনার সাহায্যে এনে দিবেন।

৯. বোনদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলুনঃ এটা করার মাধ্যমে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করছি এবং এর জন্য পুরস্কৃত হব ইনশা আল্লাহ।

১০. সালাম বিনিময় করুনঃ এটা পরিচিত কিংবা অপরিচিত সকল বোনের সাথে করা উচিত। রত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,


তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না ঈমানের অধিকারী হবে, আর পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবেআমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ সম্পর্কে নির্দেশ করব না যা আমল করলে তোমরা ভালোবাসার ডোরে আবদ্ধ হতে পার? শোন, তোমরা সালামের আদান-প্রদানকে নিজেদের মধ্যে বহুল প্রসার ঘটাও।

[সহীহ মুসলিম]

সবশেষে, চলুন আমরা আমাদের নিয়্যাতকে পুনরুজ্জীবিত করি এবং নিশ্চিত করি আমরা আমাদের সকল ভালো কাজ করছি একমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা)-এর জন্য এবং অনুসরণ করছি প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দেখানো পথ।

মূল লেখকঃ দিনা আবূবাশা
অনুবাদ সহযোগীতাঃ মাসুদ শরীফ ভাই

0 on: "রামাদানে নারীদের জন্য (যাদের মাসিক চলছে) ১০ টি সহজ ইবাদাত"